Wednesday, November 13, 2013

অ্যাডভান্স অ্যান্ড্রয়েড সহজপাঠ প্রথম পর্ব

Julianna | 10:48 PM |
অ্যান্ড্রয়েড, স্মার্টফোন জগতে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত একটি নাম। বিশ্ব বাজারে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের স্মার্টফোন প্রচলিত থাকলেও অ্যান্ড্রয়েডই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত এবং জনপ্রিয় স্মার্টফোন প্ল্যাটফর্ম। এখন আর কেবল স্মার্টফোনই নয়, অন্যান্য স্মার্ট ডিভাইস যেমন ট্যাবলেট কম্পিউটার, হাত ঘড়ি, টিভি এগুলোতেও আজকাল অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে অ্যানড্রয়েড ব্যবহৃত হচ্ছে।
Android KitKat_0.jpg
তুলনামূলক কম মূল্য, সহজলভ্যতা, নিজের ইচ্ছে মত কাস্টমাইজ করার সুবিধা মূলত এই তিন কারণেই অ্যান্ড্রয়েড তার প্রতিদ্বন্দ্বী অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের চেয়ে প্রতিযোগিতায় অনেক এগিয়ে। দিন দিন বিশ্বজুড়ে অ্যান্ড্রয়েড চালিত ডিভাইস ব্যবহারকারীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। নতুন ব্যবহারকারীরা প্রথম দিকে প্ল্যাটফর্মটির সাথে নিজেদের খাপ খাওয়াতে কিছুটা সময় নিলেও খুব দ্রুত এর সাথে মানিয়ে নিতে সক্ষম। কাজের ধরন এবং চাহিদার ভিত্তিতে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।
১. সাধারণ শ্রেণী-
যারা তাদের কেবল অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসকে দৈনন্দিন সাধারণ কাজের জন্যই ব্যবহার করে, অর্থাৎ ফোন কল করা, প্রয়োজনীয় মেইল চেক করা, অন্যের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা, গান শোনা, অবসরে অডিও, ভিডিও বা গেইম খেলা ইত্যাদি। মোট কথা প্রচলিত কাজ কর্মের বাইরে এই শ্রেণীর গ্রাহকদের অ্যান্ড্রয়েড সংক্রান্ত অন্য কোন বিষয়ে আগ্রহ দেখা যায় না। বেশিরভাগ অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের আমরা এই শ্রেণীতে ফেলতে পারি।
২. অ্যাডভান্স শ্রেণী-
এই শ্রেণীর ব্যবহারকারীরা তাদের অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসটি কেবল মাত্র ফোন কল, মেইল করা, গান শুনা ইত্যাদি কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চান না, বরং কিভাবে তাদের ডিভাইসটির পূর্ণ ক্ষমতা কাজে লাগানো যায় সেটি সম্পর্কে কৌতূহলী। এরা এদের ডিভাইস নিয়ে গবেষণা করতে পছন্দ করে। ইন্টারনেট ঘেটে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে এদের প্রচুর আগ্রহ। ডিভাইসের এক্সটারনাল বিল্ট থেকে শুরু করে হার্ডওয়্যার এর বিভিন্ন খুঁটিনাটি সমস্যা এরা নিজেরাই ঠিক করে ফেলতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে যে সব নতুন হাই এন্ড অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস বাজারে আসছে সেগুলোর স্পেসিফিকেশন খেয়াল করলে দেখা যায় আজ থেকে প্রায় ৩-৪ বছর পূর্বে আমরা যে ধরনের কম্পিউটার চালাতাম ডিভাইসগুলোর ক্ষমতা অনেকটা সেই কম্পিউটারগুলোর কাছাকাছি। সুতরাং, অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসকে কেবল মাত্র একটি ফোন হিসেবে দেখার আর উপায় নেই।
আমাদের এই টিউটোরিয়ালটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে একজন সাধারণ অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীকে অ্যান্ড্রয়েডের বিভিন্ন অ্যাডভান্স বিষয় সম্পর্কে জানানো যাতে করে সে ধীরে ধীরে একজন অ্যাডভান্স শ্রেণীর ব্যবহারকারীতে পরিণত হতে পারে। তাহলে আর দেরি না করে আসুন আমরা অ্যাডভান্স অ্যান্ড্রয়েডের বিভিন্ন বিষয়গুলো জেনে নেয়ার চেষ্টা করি।

অ্যানড্রয়েড টার্মিনোলজিঃ

১. ফার্মওয়্যারঃ
প্রথমেই আমরা যে শব্দটির সাথে পরিচিত হব সেটি হল ফার্মওয়্যার। আভিধানিক অর্থে ফার্মওয়্যার মূলত এক ধরনের স্থায়ী সফটওয়্যার যেটি অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের রম এ সংরক্ষিত থাকে। সহজভাবে বললে ফার্মওয়্যার কে আমরা কম্পিউটারের ‘উইন্ডোজ’ এর সাথে তুলনা করতে পারি। কম্পিউটারের জন্য যেমন বিভিন্ন ভার্সনের উইন্ডোজ রয়েছে (এক্সপি, উইন্ডোজ ৭, উইন্ডোজ ৮ ইত্যাদি) ঠিক তেমনি অ্যান্ড্রয়েডের জন্য বিভিন্ন ভার্শনের ফার্মওয়্যার রয়েছে। উল্লেখ যোগ্য কিছু ফার্মওয়্যার হল- জিঞ্জার ব্রেড, আইস ক্রিম স্যান্ডউইচ, জেলি বিন, কিটক্যাট। অনেক সময় ফার্মওয়্যার শব্দটি না ব্যবহার করে আমরা ‘রম’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকি। অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস কেনার সময় সেটিতে যে ফার্মওয়্যার বা রম দেয়া থাকে তাকে আমরা স্টক ফার্মওয়্যার/ স্টক রম/ অফিসিয়াল ফার্মওয়্যার কিংবা অফিসিয়াল রম নামে অভিহিত করে থাকি। এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়, নামে এক হলেও প্রত্যেক ডিভাইসের জন্য ফার্মওয়্যার আলাদা। আপনি যদি কখনও এক ডিভাইসের ফার্মওয়্যার অন্য ডিভাইসে ইনস্টল করার চেষ্টা করেন তাহলে আপনার ডিভাইসটি নষ্ট হয়ে যাবে। কাজেই ফার্মওয়্যার বা রমের বিষয়ে আমাদের কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন জরুরি।
২. কার্নেলঃ
কার্নেল শব্দটির সাথে আমরা যারা কম্পিউটার ব্যবহার করি তারা সবাই কম বেশি পরিচিত। বিশেষত লিনাক্স ব্যবহারকারীদের কাছে শব্দটি বেশি উচ্চারিত হয়। অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমটি একটি লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম। কাজেই অ্যান্ড্রয়েডের সাথেও কার্নেল শব্দটি জোরালো ভাবে উচ্চারিত হয়। কার্নেল যে কেবল লিনাক্স আর লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম এর অংশ তা নয়। প্রকৃত পক্ষে যে কোন অপারেটিং সিস্টেম চালাতে গেলেই কার্নেল প্রয়োজন। সে হিসেবে, ম্যাক ওএস, উইন্ডোজ, কিংবা মোবাইল ভিত্তিক আইওএস এদের সবারই নিজস্ব কার্নেল রয়েছে। এখন মূল প্রশ্ন কার্নেল জিনিসটি আসলে কি? সহজভাবে বলতে গেলে, কার্নেল এমন একটি জিনিস যেটি আপনার ডিভাইসের হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার এর মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে থাকে। অর্থাৎ কার্নেল ছাড়া আপনি আপনার ডিভাইসের সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার কোনটিই কাজে লাগাতে পারবেন না। আমরা যখন আমাদের ডিভাইসটি নিয়ে কোন কাজ করি তখন সফটওয়্যার কার্নেলের সাহায্যে হার্ডওয়্যার এর কাছে রিকোয়েস্ট পাঠায় এবং আমাদের ডিভাইস সে অনুযায়ী কাজ করে। আবার এর উল্টোটিও প্রযোজ্য। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে- ধরুন, আপনি আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনের সাহায্যে একটি ছবি তুলতে চান। এখন আপনি যখন আপনার ক্যামেরা অ্যাপটি ওপেন করবেন তখন আপনার ফোনের ক্যামেরার হার্ডওয়্যারে একটি সিগন্যাল চলে যাবে এবং ক্যামেরা ছবি তোলার জন্য প্রস্তুত হবে। যখন আপনি ক্যামেরা সাটার চাপবেন তখন ঠিক আরেকটি সিগন্যাল আপনার ক্যামেরা অ্যাপ এ চলে আসবে এবং ছবি তোলা শেষ হলে সেটি গ্যালারিতে সংরক্ষিত হবে। এ পুরো কাজটির নিয়ন্ত্রক কার্নেল।
কাস্টম কার্নেল বলে একটি কথা আমরা প্রায়ই শুনে থাকব। যখন কোন ডেভলপার অরিজিনাল কার্নেল সোর্স ব্যবহার করে, তাতে বিভিন্ন পরিবর্তন, পরিবর্ধন করে সম্পূর্ণ নতুনভাবে একটি কার্নেল তৈরি করবে তখন আমরা তাকে কাস্টম কার্নেল বলব। এতে বিভিন্ন বিষয় সংযুক্ত করা যায় বলে অরিজিনাল কার্নেল এর চেয়ে এর কর্মক্ষমতা বেশি হয়ে থাকে। কাস্টম কার্নেল ব্যবহার করে বিভিন্ন কাজ করা যায়- যেমন সিপিইউ এর ক্লক স্পিড পরিবর্তন করা, জিপিইউ এর ক্লক স্পিড পরিবর্তন করা ইত্যাদি। পরবর্তীতে এ প্রসঙ্গে আমরা আরও বিস্তারিত জানব।
৩. বুটলোডারঃ
সহজ কথায় বলতে গেলে বুটলোডার আপনার ডিভাইসের ইন্টারনাল মেমরির আলাদা একটি পার্টিশন। বুটলোডারেই অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম লোড করা থাকে। বিষয়টি আরেকটু পরিস্কার করা যাক। বুটলোডার এক ধরনের কোড যেটি আপনার অপারেটিং সিস্টেম চালু করবে। অর্থাৎ, অপারেটিং সিস্টেম লোড হওয়ার পূর্বে বুটলোডার লোড না হলে আপনার অপারেটিং সিস্টেম চালু হবে না। আপনার ডিভাইসের অপারেটিং সিস্টেম কিভাবে চালু হবে এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য বুটলোডারে লিপিবদ্ধ আছে। কখনও যদি আপনার ডিভাইসের বুটলোডার কোন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে আপনি আপনার ডিভাইস চালু করতে পারবেন না। যেহেতু বিষয়টি অনেক বেশি স্পর্শকাতর সেহেতু প্রত্যেক ডিভাইসের বুটলোডার আলাদা। দুর্ঘটনা বশত বুটলোডার যাতে পরিবর্তিত না হয়ে যায় সেজন্য বেশিরভাগ ফোন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান তাদের ডিভাইসের বুটলোডার লক করে দিয়ে থাকে। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে এটি আপনার ফোনের সুরক্ষা প্রদান করে থাকে। লকড বুটলোডার যুক্ত কোন অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস কাস্টমাইজ করা প্রায় অসম্ভব। এ জন্য যারা তাদের ডিভাইস নিজের পছন্দ মত কাস্টমাইজ করতে চান তাদেরকে অবশ্যই বুটলোডার আনলক করে নিতে হবে।
Bootloader
৪. রুট/রুটিংঃ
অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা প্রায়ই রুট শব্দটির কথা শুনে থাকবেন। রুট ব্যাপারটি আসলে কি? খুব সহজে যদি বলি তাহলে রুট হল আপনার অ্যান্ড্রয়েডের ডিভাইসের অ্যাডমিনিস্ট্রেটর। আমরা যখন কম্পিউটার ব্যবহার করি তখন কিছু কিছু কাজের জন্য আমাদের অ্যাডমিনিস্ট্রেটর প্রিভিলেজের দরকার হয়, বিশেষ করে আমরা যদি উইন্ডোজ এর সিস্টেম ফাইলে কোন ধরনের পরিবর্তন করতে চাই তাহলে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর পার্মিশন ছাড়া সেটি সম্ভবপর হয় না। এই অ্যাডমিনিস্ট্রেটর প্রিভিলেজ কে আমরা অ্যান্ড্রয়েডের ক্ষেত্রে ‘সুপার ইউজার’ প্রিভিলেজ বলে থাকি। আপনি আপনার ডিভাইসটি রুট করলেন এর অর্থ হল, আপনি আপনার ডিভাইসের পুরো নিয়ন্ত্রন নিজে নিয়ে নিলেন। এর ফলে আপনি আপনার ডিভাইসের সিস্টেমে থাকা সব ধরনের ফাইল পরিবর্তন করতে পারবেন। তবে সাধারণ ব্যবহারকারীগণ রুটের ফলে অনেক সময় সমস্যায় পরতে পারেন। দুর্ঘটনা বশত আপনার অজান্তে কোন প্রয়োজনীয় সিস্টেম ফাইল মুছে গেলে আপনার ফোনের ক্ষতি হতে পারে। এ ছাড়াও রুটের মাধ্যমে যেহেতু আপ্ননি আপনার ডিভাইসের নিজস্ব নিরাপত্তাবলয় ভেঙ্গে ফেলবেন, সেহেতু আপনার ডিভাইসটি বিভিন্ন হ্যাকার, স্পাইওয়্যার এর আক্রমনের ঝুঁকিতে থাকবে। আর এ সমস্ত কারণে বিক্রির সময় ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ডিভাইস প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো রুট ফিচারটি বাদ দিয়ে থাকে। আপনি যদি আপনার অ্যান্ড্রয়েড এর সিস্টেম ফাইলগুলোর কাজ সম্পর্কে জানেন, এবং আপনার ডিভাইস কে হ্যাকার বা স্পাইওয়্যার এর আক্রমন থেকে সুরক্ষিত রাখার উপায়গুলো জানেন তাহলে রুটিং আপনার জন্য অত্যাবশ্যকীয় একটি বিষয়। অ্যানড্রয়েডের সব ধরনের কাস্টমাইজেশন রুটিং এর উপর নির্ভরশীল। রুট বিষয়টি নিয়ে সামনে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
root
৫. রিকভারিঃ
এক কথায় রিকভারি আপনার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের জন্য ‘বায়োস’ এর সমতুল্য। কম্পিউটারে বায়োস থেকে আমরা যেমন নতুন অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করতে পারি ঠিক তেমনি অ্যান্ড্রয়েডে রিকভারি থেকে আমরা নতুন ফার্মওয়্যার ইনস্টল করতে পারি। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের ক্ষেত্রে আমরা ইনস্টল কথাটি ব্যবহার করি, অ্যান্ড্রয়েডের জন্য আমরা এর বিকল্প ‘ফ্ল্যাশ’ শব্দটি ব্যবহার করব। ভিভাইস কেনার সময় বিল্ট ইন যে রিকভারি থাকে সেটিকে আমরা ‘স্টক’ রিকভারি বলি। স্টক রিকভারির কাজ কিছুটা সীমিত। ডিভাইসের নিরাপত্তার জন্য স্টক রিকভারিতে সুযোগ সুবিধা কিছুটা কম দেয়া থাকে। স্টক রিকভারি ব্যবহার করে স্টক রম, স্টক কার্নেল ফ্ল্যাশ, কিংবা প্রয়োজন বোধে পুরো সিস্টেম মুছে ফেলা যায়। কাস্টম কার্নেল, কাস্টম রম, কিংবা কাস্টমাইজড কোন ফাইল ফ্ল্যাশ করতে হলে প্রয়োজন হয় ‘কাস্টম রিকভারি’, এছাড়াও কাস্টম রিকভারি ব্যবহার করে চলমান রমের ব্যাক আপ তৈরি এবং তা সংরক্ষন, প্রয়োজন বোধে ব্যাক আপ রিস্টোর, মেমরি কার্ডের পার্টিশন তৈরি প্রভৃতি কাজ করা যায় নিমেষেই। অ্যান ড্রয়েডের জন্য বিভিন্ন কাস্টম রিকভারি থাকলেও ‘ক্লক ওয়ার্ক মড’ এবং ‘টিডব্লিউআরপি’ এই দুটি সর্বাধিক জনপ্রিয় রিকভারি।
CWM

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More

Search

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
Powered by Blogger.