Monday, November 11, 2013

ইন্টারনেটভিত্তিক কেলেঙ্কারি/ স্ক্যাম

Julianna | 2:31 AM |
ধরুন, আপনি ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। একটি অপরিচিত ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলেনসাথে সাথে আপনার কম্পিউটারের স্ক্রিনে কিছু অবৈধ চিত্র চলে আসলো।
আপনি যখনি এটা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টাকরবেন, ঠিক তখুনি জাতীয় ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রক প্রশাসন থেকে একটি
বার্তা চলে আসবে। যেখানে লেখা থাকতে পারে’অবৈধ কন্টেন্ট দেখা, বিতরণ অথবা ডাউনলোড করার কারনে আপনার কম্পিউটারটি লোক করে দেয়া হয়েছে।’সেক্ষেত্রে আপনি শুধু জরিমানা দিয়ে ছাড় পেতে।

পারেন অথবা আপনাকে জেলেও যেতে হতে পারে। স্ক্যাম হচ্ছে একধরনের ইন্টারনেটভিত্তিক কেলেঙ্কারি। যারা এই কাজ করে তাদের বলা হয় স্ক্যামার। এসসি ম্যাগাজিনের মতে, এইধরনের ‘স্ক্যাম’ রাশিয়া থেকেই শুরু হয়। তবে নাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির তথ্য নয় এটি। ইন্টারনেট সিকিউউরিটকম্পানি ম্যাকআফে’র একটি প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০১১ সালের প্রথম ৬ মাসের প্রতি ৪৫ দিনে ২৫ হাজারেরসামান্য কম এই ধরনের ঘটনার নমুনা পাওয়া গেছে। ২০১৩ সালের এপ্রিল থেকে জুন এই ৩ মাসে ৩২ হাজারেরওবেশি বিভিন্ন ধরনের একেবারে নতুন নমুনা তালিকাভুক্ত করা হয়। যা বছরের প্রথম ৩ মাসের চেয়ে দ্বিগুণ।ম্যাকআফে থেকে বলা হয়েছে, গত ছয় মাসে এই ধরনের ঘটনা এতো বেশি ঘটেছে যা পুর্বের সমস্তগুলোর সমষ্টিরচেয়েও বেশি। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন আইন এবং ফেডারেল সংস্থা দ্বারাও এই ধারা প্রতিফলিত হয় আপনি যদিএখনো মনে করেন যে বর্তমান সাইবার অপরাধ ‘ডিপোসড নাইজেরিয়ান স্ক্যাম” হিসেবেই রয়ে গেছে যা কিনাআপনার ভাগ্য ফেরানোর জন্য আফ্রিকান ব্যাঙ্ক থেকে সাহায্য চাইতো। তাহলে আপনি নেহায়েতই বোকার স্বর্গে বাসকরছেন। এক্ষেত্রে সাইবার নিনজা অধিক সৃজনশীল, অত্যাধুনিক এবং দুর্বোধ্যও বটে। এই কারণে মনে রাখবেন ৫টিলিঙ্ক কখনও কোনও ক্ষেত্রে ক্লিক করা যাবে না
১. আপনার নিকট অপরিচিত মোবাইল অ্যাপস ই-মেইলের ‘স্প্যাম’ এর মাধ্যমে স্ক্যাম করা খুব সহজ ব্যাপার।মোবাইলভিত্তিক ডিভাইসের চাহিদা বাড়ায় প্রচুর মোবাইল অ্যাপস তৈরি হচ্ছে। আর এই সুযোগে স্ক্যামাররা তাদেরনিজস্ব অ্যাপসগুলোও ইন্টারনেটে ছেড়ে দিচ্ছে। ম্যাকআফের মতে, ২০১৩ সালের এপ্রিল থেকে জুনে এই অ্যাপস এরমাধ্যমে অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ৩৫ পারসেন্ট আক্রমণ ঘটেছে। যা একেবারে নতুন নমুনার পরিমাণ ১৮ হাজারের মত।নতুন ধরনের ডিভাইসে এই আক্রমণের পরিমাণ বেশি। এই পদ্ধতিতে এক তৃতীয়াংশেরও বেশি মোবাইল হ্যাকডহয়েছে। মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনে নতুন এই আক্রমণের ঘটনা জানুয়ারি থেকে মার্চের চেয়ে চাইতে জুনে দ্বিগুণ ঘটেছে।এই চিত্র এটাই নির্দেশ করে যে সাইবার অপরাধীরা কতটা বুদ্ধিসম্পন্ন হয়ে উঠছে। মেলোয়ার এক ধরনের সিস্টেম যাডিভাইসকে অকেজো করে ফেলে। মোবাইল মেলোয়ার অনেক প্রকার হতে পারে। এমনকি আপনার কাছ থেকেওআসতে পারে। স্ক্যামাররা এই অ্যাপসগুলোকে একেবারে বৈধ অ্যাপস এর মত করেই উপস্থাপন করে। এইঅ্যাপসগুলোয় এমন প্রোগ্রাম সেট করা থাকে যাতে আইনসিদ্ধভাবেই আপনার অবস্থান যোগাযোগের মাধ্যম ওঅন্যান্য তথ্য চলে আসবে। এবং কালোবাজারে ছড়িয়ে যাবে। পরিত্রাণের উপায়, হুটহাট কিছু করার চিন্তা পরিহারকরুন। প্রথম দেখাতেই কোন লিঙ্কে ক্লিক করবেন না। সেটা যতই প্রয়োজনীয় কিংবা আকর্ষণীয় হোক না কেন। সবঅ্যাপস কখনোই নিরাপদ নয় এটা মনে রাখবেন। ডাউনলোড করার আগে ভালোভাবে দেখে শুনে ডাউনলোডকরুন।
২. সর্বশেষ এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় স্ক্যাম যা বহুল ভাবে ব্যাবহৃত হয়। কারণ এটা মাইক্রোসফটের একজন কর্মীরমতোই কাজ করে থাকে। মাইক্রোসফটের কর্মী পরিচয় দিয়ে ই-মেইল পাঠায়, তাৎক্ষণিকভাবে মেসেজ পাঠিয়েসতর্কবার্তা দেয় যে আপনার কম্পিউটারে ভাইরাস আছে। সমস্যা সমাধানের জন্য একটা লিঙ্ক দেয়। যেটাতে ক্লিককরা মানেই আত্মঘাতী হওয়া। এই ধরনের চোরেরা মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ ডেস্ক কর্মী, মাইক্রোসফট ডেভ্লপমেন্টও গবেষণা দলের কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে। একবার যদি স্ক্যামাররা আপনার ডিভাইসটি নিয়ন্ত্রণ করতেসক্ষম তাহলে প্রথমে বিদ্বেষপূর্ণ সফটওয়ার ইন্সটল করবে। এরপর আপনার কম্পিউটারে রক্ষিত ব্যক্তিগত তথ্য,ক্রেডিট কার্ডের গোপন নম্বর চুরি করবে। সুত্র, বেটার বিজনেস ব্যুরো। পরিত্রাণের উপায়, কখনোই অনির্ভরযোগ্যতথ্যে বিশ্বাস করবেন না। যখন দূরের কারো সাথে যোগাযোগ করবেন তখন ব্যক্তিগত তথ্যের ব্যাপারে সতর্কথাকবেন। আপনার সাথে সম্পর্ক নেই এমন কোন প্রতিষ্ঠান থেকে আপনার সাথে যোগাযোগ করা হলে প্রথমেপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কে পরে যোগাযোগকারীর ব্যাপারে তথ্য নিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিবেন। এরপর ততটুকুই বলবেন যতটুকুপ্রয়োজনীয়।
৩. অন্যমনষ্কভাবে কার্টুন সদৃশ কোন চিত্র বা স্প্যামের ওপর ক্লিক পড়ে গেলো। অথবা আপনার মেইলে একটালোভনীয় ই-মেইলের সাথে লিঙ্ক আসলো আপনি ক্লিক করলেন আর সাথে আপনার পরিচিত সবার মেইলে একটাপর্নো চিত্র ছড়িয়ে পড়লো। সাইবার অপরাধে এই ধরনের ঘৃণ্য কাজগুলো মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে।পরিত্রাণের উপায়, সতর্ক হোন। অমনোযোগের একটা ক্লিক আপনার বাস্তব জীবনের বড় ধরনের দুঃখের কারণ হয়েদাঁড়াতে পারে। সব সময় নিরাপত্তার ব্যাপারটা মাথায় রেখে কাজ করুন। না হলে এই কাজই আপনাকে অন্তত বছরেহলেও আত্মঘাতী পরিস্থিতির সম্মুখীন করবে। তাই ফাঁদে পড়ার আগে নিরাপত্তার যে ‘গ্যাপ’ আছে সেগুলো পূরণকরুন। যদি আপনি স্বাভাবিকভাবেও এই ধরনের কাজ করে থাকেন তাহলে পরিবেশ পরিস্থিতি আপনাকে ‘ওয়ানওয়েটিকেট’ দিয়ে এমন জায়গায় পাঠাবে যেখান থেকে ফেরত আসা সম্ভব নয়।
৪. রয়েছে ‘ভালো কাজের স্ক্যাম কর্তৃপক্ষ’ স্ক্যাম কর্তৃপক্ষের সাহায্যে ই-মেইল টেক্সট অথবা ফোন কল আমাদেরদৈনন্দিন জীবনের অনেক কাজই করে দেয়। যেমন অ্যাকাউন্ট চেক করা, আয়কর হিসাব রাখা, ক্রেডিট কার্ডদেখভাল। এখন অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত তথ্য প্রবেশ করিয়ে আমাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে হয়। কিন্তু কোনসময় দেখা গেলো সঠিক তথ্য দেওয়ার পরও কাজ হচ্ছে না। এটা স্ক্যামারদের ভণ্ডামি নয়। ‘ভালো কাজের স্ক্যামকর্তৃপক্ষ’র এটা একটা দুর্বল দিক। মে ২০১২ থেকে এপ্রিল ২০১৩ এই এক বছরে ১০২১০০ এই সুবিধাগ্রহণকারীরাএই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। গত দুই বছর থেকে দুই ধরনের সেবা গ্রহণকারী এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীনহচ্ছেন। ইন্টারনেট সিকিউরিটি কম্পানি ক্যাসপারস্কি ল্যাব জানায়, এই কর্তৃপক্ষের সাথে ২০ পারসেন্ট সাইবারঅপরাধী যুক্ত আছেন। ক্যাসপারস্কি ল্যাব ৫০ ভাগ ভুয়া, প্রতারণামুলক ওয়েবসাইটের সন্ধান পেয়েছে। যার মধ্যেরয়েছে ভুয়া ব্যাঙ্ক, ক্রেডিট কার্ড কম্পানি, পেপল’র মত অর্থনোইতিক প্রতিষ্ঠান। পরিত্রাণের উপায়, সুন্দর নামেরব্যক্তিগত তথ্যে মাদকতা থাকে। কোন লিঙ্ক ক্লিক করার আগে, ইউজারনেম পাসওয়ার্ড প্রবেশ করানোর আগেথামুন। শ্বাস নিন, আরেকবার চিন্তা করুন। কোনো স্বনামধন্য অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান অথবা সরকারি সংস্থা কখনইকোন তথ্য ই-মেইল এর মাধ্যমে জানতে চাইবে না। উপর্যুপরি তারা কখনই প্রতারণার শিকার ব্যক্তিদেরঅপ্রত্যাশিতভাবে যোগাযোগ এবং স্পর্শকাতর তথ্যের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করবে না। যদি আপনি কোনো ই-মেইলপান যেটা আপনাকে অনলাইন প্রতারণার ব্যাপারে সতর্ক করে দিচ্ছে এবং ভেরিফাই করার জন্য আপনার ই-মেইলএর মাধ্যমে অ্যাকাউন্টের নাম ও পাসওয়ার্ড চায় তবে অবশ্যই সেটি একটি ‘স্ক্যাম’।
৫. ড্রাগ স্প্যাম কাছে এবং দূরে ই-মেইল ব্যাবহার সর্বত্র। আর সবচেয়ে বেশি স্প্যাম থাকে এই ই-মেইলেই। বুদ্ধিমানসাইবার অপরাধীরা মানুষকে প্ররোচিত করার জন্য ই-মেইলে উন্মুক্ত লিঙ্ক পাঠায়। আর কম্পিউটার নষ্ট হওয়ার মূলেইরয়েছে স্প্যামিং। এই সব স্প্যামিং এতোই চাতুর্যের সাথে করা হয় যে বোঝাই সম্ভব হয় না। কারণ সাবজেক্ট এর স্থানেলেখা থাইকে চাকরি, ভ্রমণ, শপিং ডিসকাউন্ট, যৌনতা, সংবাদ। কিন্তু সম্প্রতি সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘সাবজেক্ট লাইন’হলো ‘ড্রাগস’। ম্যাকআফের একটি অনুসন্ধানী দল খুঁজে পেয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রে ‘স্ক্যাম’ এর জন্য ২০ ভাগ সাবজেক্টলাইনে থাকে ‘ড্রাগস’। এটা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিভাগের জন্য মোটেও চমকে ওঠার খবর নয়। ইউপিএস বা ফেডেক্সজানিয়েছে এটা কখনোই প্যাকেজ আকারে আসে না। আলাদা আলাদা ভেবে সেকেন্ডের দুরত্বে আসে। পরিত্রাণেরউপায়, কখনোই টোপ হিসেবে এটা গিলবেন না। আপনি কেন যার তার কাছ থেকে ড্রাগস কিনবেন? কে আপনাকেনা দেখেই ইন্টারনেটে, আপনার সাথে যোগাযোগ করলো? এই টোপ গিললে আপনার স্বাস্থ্য তো যাবেই, ব্যাঙ্কঅ্রাকাউন্টের সাথে সবই চলে যাবে। আপনি যদি আকর্ষণীয় প্যাকেজ কিনতেই চান তাহলে সরাসরি দোকান কিংবাপ্রতিষ্ঠানের ডিস্ট্রিবিউটরদের সাথে যোগাযোগ করে কিনুন। এই ধরনের ‘স্ক্যাম’ চলছে এবং দীর্ঘসময় ধরে চলবেও।ভয়, অযত্ন, অবহেলা, অথবা ধ্বংসের মুলেই রয়েছে অর্থ। স্বাস্থের মোড়কে সম্পৃক্ত রয়েছে অপরাধী। এমনকি সে ইজ্জতহরণকারীও হতে পারে। ইন্টারনেট ব্যাবহার যেমন সুবিধা ও দায়িত্ত্ববোধ তৈরি করে তেমনি এটা আপনাকেআত্মঘাতীও করতে পারে। ক্লিক করার আগে এর সব দিক দেখে নিন। থামুন। এরপর স্মার্টলি ক্লিক করুন।

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More

Search

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
Powered by Blogger.