সম্প্রতি একটি অনলাইন নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, অ্যান্ড্রয়েড ৪.৩ এবং এর পূর্বের সংস্করণে চালিত অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসসমূহ মারাত্মক নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে এর পরিপ্রেক্ষিতে গুগল জানিয়েছে, ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তার জন্য প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে কোন ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।
বরং ব্যবহারকারীদের আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস এবং এতে থাকা বিভিন্ন ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপদ রাখতে টাইমস অফ ইন্ডিয়া প্রকাশ করেছে ১০টি সতর্কতামূলক টিপস।
প্রিয় টেকের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল টিপসগুলো:
১. স্ক্রিন লক ব্যবহার: অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের নিরাপত্তার প্রাথমিক ধাপ হল ডিভাইসে স্ক্রিন লক ব্যবহার করা। স্ক্রিন লক হিসেবে পিন, পাসওয়ার্ড, প্যাটার্ন কিংবা নিজের ছবি তুলে ফোনটি নিরাপদ রাখা যেতে পারে। সেটিং থেকে সহজেই সেট করে নেওয়া যাবে কাঙ্ক্ষিত প্যাটার্ন লক।
২. ডিভাইস এনক্রিপশন: ডিভাইসে থাকা বিভিন্ন তথ্যের নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে এনক্রিপশন সিস্টেম। এর ফলে প্রতিবার ফোন বন্ধ করে চালু করলে সেসকল ডেটা দেখার সময় প্রয়োজন হবে পাসওয়ার্ড বা পিন। ডিভাইসটি চুরি কিংবা হারিয়ে যাওয়ার পর একবার বন্ধ করে চালু করলেই আপনার সকল ডেটা এনক্রিপ্টেড হয়ে যাবে। ফলে অন্য কেউ চাইলেও আপনার ডেটা ব্যবহার করতে পারবে না। সেটিংস মেন্যু থেকে চালু করে নেওয়া যাবে এনক্রিপশন সিস্টেম। তবে এটি ব্যবহার করলে ফোনের গতি কিছুটা কমে যেতে পারে।
৩. অফিসের কাজে ব্যক্তিগত ফোন ব্যবহারে সতর্কতা: অফিসের কাজে নিজের ডিভাইসটি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে থাকতে হবে সচেতন। কেননা এক্ষেত্রে সচেতনতার অভাবে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে ডিভাইসে ভাইরাস কিংবা ম্যালওয়্যার আক্রমণের সম্ভাবনা থাকে, এমনটাই জানিয়েছে নিরাপত্তা বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ইসেট। আর তাই অফিসের কাজে নিজের ডিভাইসটি ব্যবহার করতে হলে অফিসের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের কর্মীদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিয়ে কাজ করা যেতে পারে।
৪. ডিভাইস ম্যানেজার ব্যবহার: ফোন হারিয়ে গেলে কিংবা চুরি হলে সেটির অবস্থান নির্ণয়ের জন্য রয়েছে গুগলের ডিভাইস ম্যানেজার অ্যাপ। এই অ্যাপ ব্যবহার করে ফোনে টানা ৫ মিনিটের জন্য ফুল ভলিউমে রিং বাজানোর ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া ডিভাইস ম্যানেজারের ওয়েবসাইট থেকে দূর থেকেই ফোন লক কিংবা ফোনে থাকা সকল তথ্য মুছে ফেলার ব্যবস্থাও রয়েছে। এই সুবিধা পেতে হলে প্লে স্টোর থেকে ডিভাইস ম্যানেজার অ্যাপটি ইন্সটল করে নিতে হবে।
৫. এসডি কার্ডে স্পর্শকাতর তথ্য রাখার ক্ষেত্রে সতর্কতা: অনেকেই ফোনে থাকা এসডি কার্ডে নিজের বিভিন্ন ধরণের স্পর্শকাতর তথ্য সংরক্ষণ করে থাকেন। তবে স্পর্শকাতর তথ্য এসডি কার্ডে না রাখাই ভালো। কারণ এসডি কার্ড থেকে খুব সহজেই বিভিন্ন তথ্য হাতিয়ে নেওয়া যায়। এর পরিবর্তে এসকল তথ্য ফোনের ইন্টার্নাল মেমোরিতে রাখা যেতে পারে।
৬. অপরিচিত অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপ ইন্সটল না করা: গুগল প্লে স্টোরের বাইরের বিভিন্ন স্টোর থেকে অ্যাপ ইন্সটল করার ফলে অনেকেই বিভিন্ন সময় হ্যাকারের আক্রমণের শিকার হন। আর তাই অ্যাপ ইন্সটল করার ক্ষেত্রে সব সময় প্লে স্টোরের উপর নির্ভর করা শ্রেয়।
৭. অ্যাপ লকার ব্যবহার: বিভিন্ন অ্যাপস লক করে রাখতে ভিন্ন অ্যাপ লকার ব্যবহার করা উচিত। এর ফলে গ্যালারি কিংবা ইনবক্সে থাকা নিজের বিভিন্ন ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপদ রাখা যাবে। অ্যাপ লকারের মাধ্যমে মূলত এসকল অ্যাপের জন্য আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করা হয়।
৮. ফোন রুট করা থেকে বিরত থাকা: রুট করা নানা দিক থেকেই ডিভাইসের জন্য ক্ষতিকর। এর ফলে অনেক অযাচিত অ্যাপ ডিভাইসে ইন্সটল হয়ে যেতে পারে। এছাড়া ফোন রুট করা হলে অনেক ক্ষেত্রেই ফোনের ওয়্যারেন্টি বাতিল হয়ে যায়।
৯. সফটওয়্যার আপডেট করা: বিভিন্ন সময়ে গুগল সফটওয়্যার আপডেট প্রকাশ করে থাকে। এসকল আপডেটে নতুন ফিচার যুক্ত করার পাশাপাশি রাখা হয় নিরাপত্তার আরও নতুন নতুন ব্যবস্থা। তাই নিয়মিত আপডেট চেক করে আপডেট করে নেওয়া ভাল। ডিভাইসের সেটিংস মেন্যুতে থাকা 'অ্যাবাউট' অংশ থেকে সফটওয়্যার আপডেট চেক করা সম্ভব।
১০. প্রাইভেট ব্রাউজিং মোড ব্যবহার করা: ডিভাইসে ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় ব্রাউজারের ইনকগনিটো বা প্রাইভেট উইন্ডো ব্যবহার করা উচিত। এর ফলে ব্রাউজিং হিস্টোরি সংরক্ষিত হয়ে থাকবে না। এছাড়া ক্রোম ব্রাউজার থেকে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে গুগল অ্যাকাউন্ট থেকে সাইন আউট করে নেওয়া উচিত।