Friday, March 14, 2014

মাইক্রোসফট এক্সপি'র জন্য সাপোর্ট বন্ধ করে দিচ্ছেঃ এখন কী করনীয়?

Julianna | 10:23 PM |
জায়ান্ট সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট এবছরের আসছে ৮ই এপ্রিল থেকে তাদের এক সময়কার জনপ্রিয় একটি অপারেটিং সিস্টেম ‘উইন্ডোজ এক্সপি’র জন্য আর কোন সাপোর্ট প্রদান করবেনা এবং এই বিষয়টি আশা করি আমরা যারা প্রযুক্তি নিয়ে কিছুটা হলেও ঘাটাঘাটি করি তারা কম বেশি সবাই জানি। সব টেক পোর্টালের মত প্রিয় টেকেও এটি খবর আকারে প্রকাশ পেয়েছিল, আপনারা যারা প্রিয় টেকের নিয়মিত পাঠক তারা পড়ে থাকবেন হয়ত। যাই হোক, আমি আজ এই বিষয়টি নিয়ে কিছুটা বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করব, এবং এই লেখাটি মূলত এখনও যারা উইন্ডোজ এক্সপি ব্যবহার করছেন তাদের জন্যেই।
মাইক্রোসফট কোম্পানি এই খবরটি অনেক আগে থেকেই প্রকাশ করে আসছে কেননা তারা তাদের সকল এক্সপি ব্যবহারকারীদের কাছে এই তথ্যটি পৌছে দিতে চায় যে ৮ই এপ্রিলের পর থেকে আপনি আপনার নিজ দায়িত্বে উইন্ডোজ এক্সপি ব্যবহার করবেন কেননা, কোন প্রকার সিকিউরিটি আপডেট এরপর থেকে মাইক্রোসফট প্রদান করবেনা।
১
এছাড়াও, ৮ই মার্চ থেকে প্রতি মাসে একবার করে উইন্ডোজ একপি ব্যবহারকারীরা একটি করে ‘END OF SUPPORT’ – এরকমের একটি পপ-আপ বার্তা পাবেন। এই পপ-আব বার্তাটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যেন প্রতিটি উইন্ডোজ এক্সপি ব্যবহারকারী এই খবরটি জানতে পারেন।

এই ‘END OF SUPPORT’ এর মানেটা কি??

দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ এক্সপির জন্য নানারকম সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে। যখনই কোন প্রকার নতুন ক্ষতিকর বাগ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে, মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠানটি সেই বাগটির জন্য উইন্ডোজ আপডেটের মাধ্যমে নানা রকম প্যাচ প্রদান করে সহায়তা করেছে। এবং, এর মাধ্যমেই কম্পিউটারের নিরাপত্তা অনেকটুকু শক্ত হয়ে থাকে।
এই সাপোর্ট এর তারিখ শেষ হয়ে যাবার পর মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠান থেকে উইন্ডোজ এক্সপির জন্য সিকিউরিটি সংক্রান্ত কোন প্যাচ বা অন্য যে কোন প্রকার সহায়তা প্রদান করা হবেনা। এর ফলে একজন হ্যাকার যখন উইন্ডোজ এক্সপির জন্য মাইক্রোসফটের দেয়া শেষ নিরাপওা ব্যবস্থায় একটি ত্রুটি খুঁজে পাবে তখন থেকে সেই কম্পিউটারটি ইন্টারনেট সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন না হওয়া পর্যন্ত তারা এই ত্রুটির সাহায্যে আপনার ক্ষতি করতে সক্ষম হবে। সময়ের সাথে, উইন্ডোজের এই এক্সপি অপারেটিং সিস্টেমটি অনেক বেশি ইনসিকুয়ার (অনিরাপদ) হয়ে যাবে কেননা আস্তে আস্তে নতুন নতুন ত্রুটি বের হতে থাকবে এবং যেহেতু এই ত্রুটি গুলোর জন্য মাইক্রোসফট থেকে আর কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রদান করা হবেনা। এই অবস্থায় অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার কিছুটা সাহায্যে করবে ঠিকই কিন্তু মনে রাখবেন, কোন অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারই নিখুঁত নয়। তাই কম্পিউটারের সর্বোচ্চ সুরক্ষার জন্য নিরাপত্তার একটি মাত্র দিক ব্যবহার না করে কয়েকটি লেয়ার (স্তর) ব্যবহার করা উচিৎ হবে।
এছাড়াও, সময়ের সাথে সাথে, অন্যান্য সফটওয়্যার নির্মানকারী প্রতিষ্ঠান এবং ডেভেলপাররা উইন্ডোজ এক্সপি অপারেটিং সিস্টেমের সাথে উপযুক্ত – এমন সফটওয়্যার তৈরী করা বন্ধ করবে। যেমনটি ধরুন, উইন্ডোজের অনেক আধুনিক সফটওয়্যার যেমন আপনি উইন্ডোজ ৯৮-এ ব্যবহার করতে পারেন না তেমনি ভাবে একটি সময় এরকম অনেক সফটওয়্যার বাজারে পাওয়া যাবে যা আপনি উইন্ডোজ এক্সপিতে ব্যবহার করতে পারবেন না।

তাহলে এখন আপনি কোন অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করবেন??

‘END OF SUPPORT’ এর আরেকটি অর্থ হচ্ছে যে এখনই সময় আপ-টু-ডেট হবার! আপনার যদি উইন্ডোজ ৮ এর নতুন লুকটি ভালো লেগে না থাকে তবে আপনাকে মাইক্রোসফটের সর্বশেষ সংস্করণ (এখন পর্যন্ত) ‘Touch-first’ ভার্শন ব্যবহার করার কোন প্রয়োজনই নেই। * আপনি উইন্ডোজ ৭ অপারেটিং সিস্টেমটি কিনে ব্যবহার করতে পারেন। উইন্ডোজ ৭ অপারেটিং সিস্টেমটিকেও সফল একটি অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে ধরা হয়ে থাকে কেননা উইন্ডোজ ভিসতায় মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠানটি সফলতা না পেলেও পরবর্তী সময়ে উইন্ডোজ ৭ দিয়েই বাজার মাতিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। ** উইন্ডোজ ৭ এর ক্ষেত্রে মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালের ১৪ই জানুয়ারি পর্যন্ত সিকিউরিটি আপডেট এবং সকল সাপোর্ট প্রদান করে যাবে এবং উইন্ডোজ ৮ এর ক্ষেত্রে এই সাপোর্ট ব্যবহারকারীরা পাবে ১০ই জানুয়ারী, ২০২৩ পর্যন্ত।
এটা ঠিক যে উইন্ডোজের অপারেটিং সিস্টেমগুলো অনেক দামী এবং বলা চলে এই দামে পেন্টিয়াম ৪ প্রসেসর বা ডুয়াল কোর প্রসেসরের একটি কম্পিউটারই কিনে ফেলা যায়। তাই, আপনাকে যে কিনে উইন্ডোজই ব্যবহার করতে হবে তা নয়, আপনি চাইলে উবুন্টু বা এর আরও লাইট ভার্শন লুবুন্টু ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
২
* আমি মাইক্রোসফট এর অপারেটিং সিস্টেম কিনে ব্যবহার করার কথা বলেছি কেননা আমরা কোন ভাবেই পাইরেসি সমর্থন করিনা। যদিও, দামটা অনেক বেশি হয়ে দাঁড়ায় তবুও অনেকেই কিন্তু ইদানিং অপারেটিং সিস্টেম কিনেই ব্যবহার করছেন।
** তথ্যগুলো মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ লাইফ সাইকেল ফ্যাক্ট শীট থেকে নেয়া হয়েছে।

কিন্তু আমার যে উইন্ডোজ এক্সপিই দরকার ... এখন?

অনেকেই আছেন যারা পুরাতন কিছু সফটওয়্যার ব্যবহার করেন ব্যবসার জন্য যা নতুন অপারেটিং সিস্টেম সমর্থিত নয় আবার অনেকের কম্পিউটারের কনফিগারেশনের জন্য সমস্যা হতে পারে। কি আর করা, যেহেতু এই ক্ষেত্রে আপনার উইন্ডোজ এক্সপিই ব্যবহার করতে হবে সেহেতু আমি কিছু ট্রিকস আপনাকে শিখিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি, আশা করি আপনার এতে করে আপনার কম্পিউটারটি সর্বোচ্চ নিরাপদ রাখা সম্ভব হবেঃ
নেট সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন করুনঃ এমন যদি হয়ে থাকে যে আপনার প্রয়োজনীয় সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করার সময় নেট সংযোগ ব্যবহার করার দরকার পরেনা তবে আপনি ইন্টারনেট সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে রাখুন এবং পারলে অফলাইনেই এই অপারেটিং সিস্টেমটি ব্যবহার করুন। কিছুটা হাস্যকর মনে হতে পারে এই কথাটি কিন্তু, আপনার কম্পিউটার নিরাপদ থাকবে এই প্রসেসেই!
ভার্চুয়াল মেশিনঃ আপনি উইন্ডোজের আধুনিক অপারেটিং সিস্টেম গুলো থেকে ভার্চুয়াল মেশিনের মাধ্যমে উইন্ডোজ এক্সপি ব্যবহার করতে পারেন। উইন্ডোজ ৭ এর প্রোফেশনাল ভার্শনে ‘Windows XP Mode’ নামের একটি সুবিধা রয়েছে যার মাধ্যমে আপনি একটি উইন্ডোজ এক্সপি ভার্চুয়াল মেশিন তৈরী করতে পারবেন এবং এই এক্সপি’র জন্য আপনাকে কোন প্রকার লাইসেন্স কী-ও কিনতে হবেনা। যদিও মাইক্রোসফট এই উইন্ডোজ এক্সপি মোড এবং ভার্চুয়াল মেশিনের জন্যেও সব সাপোর্ট ৮ এপ্রিলের পর থেকে বন্ধ করে দেবে তবুও মূল অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে এক্সপি ব্যবহার না করে ভার্চুয়াল মেশিনে ব্যাবহার করাটাই অধিক নিরাপদ হবে।

মোজিলা ফায়ারফক্স অথবা গুগল ক্রোমঃ
এই দুটি ব্রাউজারই সিকিউরিটি ফিক্সের সাথে সাথে উইন্ডোজ এক্সপির জন্য সাপোর্টেড থাকবে অন্তত পক্ষে ২০১৫ সাল পর্যন্ত। তবে, ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ৮ সিকিউরিটি ফিক্স সহ সাপোর্ট করবেনা আর। তাই, কোন একটি স্পেসিফিক (নির্দিষ্ট) সাইটের জন্য আপনার ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ব্যবহার করার দরকার পরেই তবে শুধুমাত্র সেই সাইটের জন্যেই এই ব্রাউজারটি ব্যবহার করুন। অন্যথায়, নিরাপদ দুটি ব্রাউজারের নামতো প্রথমেই বলে দিলাম।
অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহারঃ একটি অ্যান্টিভাইরাস যদিও আপনাকে পুরোপুরি সুবিধা প্রদানে সক্ষম হবেনা তবে অবশ্যই একটি অনিরাপদ অপারেটিং সিস্টেমে অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করাটা যুক্তিসম্পন্ন এবং আবশ্যক। তবে এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখবেন যে আপনার অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রামটি নিয়মিত আপডেটেড হচ্ছে কি না।
এগুলো আপনার কাছে অনেক সাধারণ কিছু টিপস মনে হতে পারে তবে খেয়াল করে দেখুন সাধারণ হলেও এগুলো যদি আপনি পালন করেন তবে সহজেই কিছুটা হলেও নিরাপদ আপনি থাকতে পারবেন।

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More

Search

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
Powered by Blogger.